Cake make recipe

কেক বানানোর রেসিপি বাংলা

কেক হলো একটি মিষ্টি খাবার যা বিশেষ করে জন্মদিন, বিয়ে, বা অন্য যে কোনো উৎসবে খাওয়া হয়, কেক ছাড়া যেন উৎসব অসম্পূর্ণ । কেক বানানো অনেকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু কিছু সহজ ধাপ অনুসরণ করে ঘরেই সুস্বাদু কেক বানানো সম্ভব।

আর ঘরে বানানো কেকের স্বাদ তো আলাদা বলাই বাহুল্য! তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কেক বানানোর বিস্তারিত রেসিপি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রতিটি ধাপে আমরা আপনার পাশে থাকব।

Cake recipe

কেক বানানোর রেসিপি: এক সুস্বাদু যাত্রা

বিভিন্ন ধরনের কেক: কেকের জগৎ অসীম। প্লেইন, চকলেট, ভ্যানিলা, ফ্রুট কেক, পাউন্ড কেক, স্পঞ্জ কেক – এই নাম শুনলেই মুখে জল আসে। তবে আজ আমরা মূলত প্লেইন কেক বানানোর উপর জোর দেব। প্লেইন কেক হলো সব ধরনের কেকের মূল ভিত্তি। এই মৌলিক রেসিপি শিখলে আপনি আপনার পছন্দমতো ফ্লেভার ও টপিং যোগ করে নানা ধরনের কেক বানাতে পারবেন।

কেক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
  1. ময়দা: কেকের মূল উপাদান।
  2. বেকিং পাউডার: কেককে ফুলিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  3. বেকিং সোডা: কেককে নরম করে তোলে।
  4. চিনি: কেককে মিষ্টি করে তোলে এবং স্বাদ বাড়ায়।
  5. ডিম: কেককে বাইন্ড করে এবং ফুলিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  6. তেল বা মাখন: কেককে নরম এবং আর্দ্র করে তোলে।
  7. ভ্যানিলা এসেন্স: কেককে সুগন্ধি করে।
  8. দুধ: কেকের ব্যাটারকে পাতলা করে তোলে।
  9. নুন: স্বাদ বাড়ায়।

আজকের এই রেসিপিতে আমরা সহজ উপায়ে ভ্যানিলা কেক বানানোর পদ্ধতি শিখব।

রেসিপি:
  • ময়দা – ২ কাপ
  • চিনি – ১.৫ কাপ
  • ডিম – ৪টি
  • তেল বা মাখন – ১ কাপ
  • বেকিং পাউডার – ১.৫ চামচ
  • ভ্যানিলা এসেন্স – ১ চা চামচ
  • দুধ – ১ কাপ
  • লবণ – ১ চিমটি
  • ফ্রুট কেকের জন্য মিশ্র ফল – (ঐচ্ছিক)

কেক বানানো প্রস্তুতির প্রক্রিয়া

প্রথম ধাপ: উপকরণ প্রস্তুতি কেক বানানো শুরু করার আগে সব উপকরণ একসাথে করে রাখুন। ময়দা ও বেকিং পাউডার একসাথে চালুন। এটি কেককে ফুলো ফুলো ও নরম করতে সাহায্য করে।

দ্বিতীয় ধাপ: চিনি ও ডিম মেশানো একটি বড় বাটিতে ডিম ভেঙে নিন। এরপর চিনি দিয়ে ভালভাবে মেশান। চিনি ভালোভাবে গলে গেলে এতে তেল বা মাখন যোগ করুন। সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করুন।

তৃতীয় ধাপ: ময়দা মেশানো এখন ময়দা ও বেকিং পাউডার ধীরে ধীরে ডিম ও চিনির মিশ্রণে যোগ করুন। মিশ্রণটি ভালোভাবে মেশাতে থাকুন যেন কোনো গুটি না থাকে। মিশ্রণের মধ্যে দুধ ঢালুন এবং ভ্যানিলা এসেন্স যোগ করুন। একদম মসৃণ মিশ্রণ তৈরি হলে আপনার কেকের ব্যাটার প্রস্তুত।

চতুর্থ ধাপ: ওভেনে বেক করা ওভেন ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রিহিট করুন। একটি কেকের টিনে হালকা তেল লাগিয়ে ব্যাটারটি ঢেলে দিন। ওভেনে ৩০-৩৫ মিনিট বেক করুন। কেকটি সঠিকভাবে বেক হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে একটি টুথপিক কেকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেখুন। টুথপিকটি পরিষ্কার বের হলে বুঝবেন কেক তৈরি হয়ে গেছে।

পঞ্চম ধাপ: সাজানো ও পরিবেশন কেকটি ওভেন থেকে বের করে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনার পছন্দমতো ফ্রস্টিং বা ফল দিয়ে সাজাতে পারেন। এরপর টুকরো করে পরিবেশন করুন।

বিভিন্ন ধরনের কেক বানানোর টিপস


১. ভ্যানিলা কেক:


ময়দা চালা: ভ্যানিলা কেক বানাতে ময়দা ভালোভাবে চালা উচিত। এটি কেককে নরম ও ফুলো ফুলো করে তোলে।
ভ্যানিলা এসেন্স: ভালো মানের ভ্যানিলা এসেন্স ব্যবহার করুন, কারণ এটি কেকের ফ্লেভারকে সমৃদ্ধ করে।
ডিমের তাপমাত্রা: ডিম অবশ্যই ঘরের তাপমাত্রায় থাকা উচিত, যা কেকের টেক্সচারকে উন্নত করে।


২. চকোলেট কেক:


কোকো পাউডার: কোকো পাউডার মিশ্রণ করার সময় এটি চালা উচিত, যাতে কোনো গুটি না থাকে।
কফি যোগ করা: কেকের ব্যাটারে সামান্য কফি যোগ করলে চকোলেটের ফ্লেভার আরও গভীর হয়।
বেক করার সময়: চকোলেট কেককে ওভারবেক করবেন না, এটি কেককে শুষ্ক করে দিতে পারে।


৩. ফ্রুট কেক


ফল মিশ্রণ: ফলগুলিকে আগে ময়দার সাথে মেশাতে হবে, যাতে তারা বেক করার সময় তলায় না বসে।
ফল ভিজিয়ে রাখা: শুকনো ফলগুলোকে একরাত ভিজিয়ে রাখলে কেকের স্বাদ আরও সমৃদ্ধ হয়।
ফ্রুট কেক স্টোরেজ: ফ্রুট কেক বেক করার পর কিছুদিন স্টোর করলে এর স্বাদ আরও ভালো হয়।


৪. রেড ভেলভেট কেক:


ক্যাকো পাউডার ও রেড ফুড কালারিং: রেড ভেলভেট কেকের জন্য সঠিক পরিমাণে কোকো পাউডার ও রেড ফুড কালারিং ব্যবহার করা উচিত।
বাটারমিল্ক: বাটারমিল্ক কেককে নরম করে এবং রেড ভেলভেট কেকের ফ্লেভার উন্নত করে।
ক্রীম চিজ ফ্রস্টিং: রেড ভেলভেট কেকের জন্য ক্রীম চিজ ফ্রস্টিং ব্যবহার করলে স্বাদ আরও উন্নত হয়।


৫. স্পঞ্জ কেক:


ডিম বিট করা: স্পঞ্জ কেকের জন্য ডিম খুব ভালোভাবে বিট করতে হবে যাতে এটি হালকা এবং ফোলানো হয়।
ময়দা মেশানো: ময়দা ধীরে ধীরে এবং হালকাভাবে মেশাতে হবে, যেন এয়ার বুদবুদগুলি ধ্বংস না হয়।
তাড়াতাড়ি বেক করা: স্পঞ্জ কেকের ব্যাটার প্রস্তুত হলে তা দ্রুত ওভেনে বেক করা উচিত, যাতে এটি ভালোভাবে ফুলতে পারে।

কেক বানানোর কিছু সৃজনশীল আইডিয়া

কেকের আকার: কেকের আকার নানা রকম হতে পারে। হার্ট আকারের, নৌকা আকারের, গাড়ি আকারের, বা অন্য কোনো আকারের কেক বানাতে পারেন।
কেকের ফ্লেভার: কেকের ফ্লেভার নানা রকম হতে পারে। চকলেট, ভ্যানিলা, লেবু, কমলা, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, কারামেল, নারকেল, ম্যাপল সিরাপ, চা, কফি ইত্যাদি ফ্লেভার ব্যবহার করতে পারেন।
কেকের টপিং: কেকের টপিং নানা রকম হতে পারে। ফ্রুট, চকলেট, ক্যান্ডি, স্প্রিংকল, নানা ধরনের ক্রিম, গানাশ, বাটারক্রিম, ফন্ডান্ট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
কেকের সাজানো: কেক সাজানোর জন্য নানা রকম আইডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। ফুল, রিবন, কাগজ, চকলেট মোল্ড, কুকি কাটার, স্টেন্সিল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

কেক বানানোর কিছু সতর্কতা

  • বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা তাজা ব্যবহার করুন: বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা তাজা ব্যবহার করুন। পুরানো বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা ব্যবহার করলে কেকটি ভালোভাবে বেক হবে না।
  • ডিম ও দুধ ফ্রিজ থেকে বের করে রাখুন: ডিম ও দুধ ফ্রিজ থেকে বের করে রাখুন যাতে তা কক্ষ তাপমাত্রায় চলে আসে।
  • ওভেনের তাপমাত্রা সঠিক রাখুন: ওভেনের তাপমাত্রা সঠিক রাখুন। খুব বেশি বা খুব কম তাপমাত্রায় কেকটি বেক হবে না।
  • কেক বেক হওয়ার পর পাত্র থেকে বার করার সময় সাবধান হন: কেক বেক হওয়ার পর পাত্র থেকে বার করার সময় সাবধান হন। কেকটি ভেঙে যেতে পারে।
  • কেক সাজানোর সময় সাবধান হন: কেক সাজানোর সময় সাবধান হন। ফ্রস্টিং বা টপিং খুব বেশি ব্যবহার করলে কেকটি ভারী হয়ে যেতে পারে এবং ভেঙে যেতে পারে।

কেক বানানোর কিছু মজার তথ্য

  • প্রতি বছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় রবিবারটি বিশ্ব কেক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
  • বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কেক হলো চকলেট কেক।
  • ভ্যানিলা কেক হলো বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় কেক।
  • প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের কেক বিক্রি হয়।
  • কেক বানানো একটি বিজ্ঞান। কেক বানানোর জন্য সঠিক পরিমাণে উপকরণ ব্যবহার করতে হবে এবং সঠিক তাপমাত্রায় কেক বেক করতে হবে।
  • কেক বানানো একটি শিল্প। কেক সাজানোর জন্য নানা রকম আইডিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
  • কেক বানানো একটি মজার এবং সৃজনশীল কাজ। কেক বানানোর সময় আপনার পছন্দমতো উপকরণ ও ফ্লেভার ব্যবহার করতে পারেন।

প্রশ্ন এবং উত্তর

কেক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় মূল উপাদানগুলি কী কী?

সাধারণত কেক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় মূল উপাদানগুলি হল: ময়দা, চিনি, ডিম, দুধ, তেল বা মাখন, বেকিং পাউডার, বেকিং সোডা এবং ভ্যানিলা এসেন্স। এছাড়াও, আপনি আপনার পছন্দমতো ফল, চকলেট চিপস বা অন্যান্য উপাদান যোগ করে কেককে আরো সুস্বাদু করতে পারেন।

ওভেন ছাড়া কেক বানানো যায় কি?

হ্যাঁ, অবশ্যই ওভেন ছাড়াও কেক বানানো যায়। আপনি গ্যাসের চুলাতে একটি পাত্রে বালি বা স্টিম র্যাক ব্যবহার করে কেক বেক করতে পারেন। এছাড়াও, মাইক্রোওয়েভ ওভেনেও কেক বানানো সম্ভব।

কেক ফুলে ওঠার জন্য কী করতে হয়?

কেক ফুলে ওঠার জন্য বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ডিমকে ভালো করে ফেটে নিতে হবে এবং ময়দার সাথে বেকিং পাউডার ও সোডা ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। ওভেনের তাপমাত্রাও কেক ফুলে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

কেক বানানোর সময় কি কোনো বিশেষ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?

হ্যাঁ, কেক বানানোর সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি. সঠিক পরিমাণে উপাদান ব্যবহার করতে হবে। সব উপাদান ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। ওভেনের তাপমাত্রা সঠিক রাখতে হবে। কেক বেক করার সময় সঠিক রাখতে হবে। বেকিং পাত্র ভালোভাবে গ্রীস করে নিতে হবে।

কেককে আরো সুস্বাদু করার জন্য কিছু টিপস দিতে পারেন?

হ্যাঁ, ভ্যানিলা এসেন্স ছাড়াও আপনি লেবু, নারকেল, চকলেট ইত্যাদি ফ্লেভার ব্যবহার করতে পারেন। কেকের মধ্যে ফলের টুকরা যোগ করতে পারেন। বাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। কেকের উপরে আইসিং করে সাজাতে পারেন।

উপসংহার

কেক বানানো একটি শিল্প যা কিছুটা ধৈর্য ও মনোযোগের প্রয়োজন। উপরের নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করলে আপনিও ঘরে বসে সুস্বাদু কেক তৈরি করতে পারবেন। পরিবারের সাথে সময় কাটাতে বা অতিথিদের আপ্যায়ন করতে কেক একটি চমৎকার খাবার হতে পারে। আরও জানতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।


Similar Posts

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *